নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের সুরমা নদীর ভাঙন পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বর্তমানে শুকনো মৌসুম হলেও প্রতিনিয়ত নদীর ভাঙনে এলাকার মানুষ দিশেহারা। বিশেষ করে ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের গাছবাড়িবাজার, দলইমাটি, পাত্রমাটি, চইলতাবাড়ি, দর্জিমাটিসহ অন্তত ৮টি স্থানে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও এলাকাগুলোতে নদীভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। নদীর পাড়ে বসবাসরত পরিবারগুলো রাত কাটাচ্ছে চরম আতঙ্কে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ পর্যন্ত ভাঙনে এলাকার একটি মাদ্রাসা পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। ঝিঙ্গাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিনই নতুন নতুন জায়গায় ভাঙনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দলইমাটির বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, প্রতি বছরই সুরমার ভাঙনে আমরা জমি ও বসতভিটা হারাই। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয় না। এবার তো পুরো গ্রাম নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে।
আরেক গ্রামবাসী আমেনা বেগম বলেন, মাদ্রাসাটা হারানোর পর মনে হচ্ছে এবার আমাদের বাড়ি-ঘরও নদীতে চলে যাবে। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। ভয়ে আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না।
এদিকে নদীভাঙনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তারা দ্রুত নদীর পাড়ে ব্লক ফেলে স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান। ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বসতবাড়ি রক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু বকর বলেন, নদীর ভাঙন ঠেকানোর জন্য আমরা সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে এখন পর্যন্ত স্থায়ী কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। আমাদের ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। ৮টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানিয়েছেন, সুরমা-কুশিয়ারা সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় এক কিলোমিটার অংশে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, আমরা জানি এলাকাবাসী দুর্ভোগে রয়েছেন। কিন্তু প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও কাজ শুরু করতে কিছু সময় লাগবে। আশা করি এই কাজ বাস্তবায়িত হলে ভাঙনের তীব্রতা কমবে।
এদিকে স্থানীয় সামাজিক সংগঠনগুলোও নদী ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা মনে করে, নদীর পাড়ে ব্লক ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।
কানাইঘাটের বাসিন্দারা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ আশা করছেন। তাদের মতে, শুধু উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করলেই হবে না; প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের সুরমা নদীর ভাঙন এখন এলাকাবাসীর জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বসতবাড়ি, ফসলি জমি, এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টাই পারে এই ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে।
Leave a Reply